পড়ায় মনোযোগ আকর্ষণ ও মানসিক চাপ কমানোর উপায়-প্রথম পর্ব - jonakiict school

Latest News

পড়ায় মনোযোগ আকর্ষণ ও মানসিক চাপ কমানোর উপায়-প্রথম পর্ব


ছবি: নেট
‘শিক্ষা জীবন মধুর জীবন,যদি না থাকতো পরীক্ষা’এমন জীবন প্রত্যাশা কখনো সম্ভব নয়। কল্পনার রাজ্যে মানুষ যতই বিচরন করুক বাস্তব জীবনেই তার জীবনের সকল লীলা সাঙ্গ করতে বাধ্য। শিক্ষাক্ষেত্রে পড়ায় মনোযোগ আকর্ষণ না করা এবং মানসিক চাপে থাকা কম বেশি সকল শিক্ষার্থীরই একটা সাধারণ সমস্যা। তাই ইচ্ছা না করলেও জীবনে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর সেই পরীক্ষা থেকে কারও পরিত্রান  নেই পরীক্ষা ব্যাতিরেখে। এমন সমস্যা সব সময় বা সব ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করে না,চাপ সৃষ্টি করলেও পড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী প্রেসনার মাঝে না থাকলে দ্রুত পড়া আত্মস্থ করতে ব্যার্থ হয়। ভালো ফলাফল বা দ্রুত পাঠ আত্মস্থ করতে একটু বেশি চাপ নিতেই হয় আর তখনই শিক্ষার্থীর মস্তিস্কে চাপ সৃষ্টি হয় যা মানসিক চাপ বলে খ্যাত। সেই দিক বিবেচনায় ‘পড়ায় মনোযোগ আকর্ষণ ও মানসিক চাপ কমানোর উপায়’ শীর্ষক লেখা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যেই কতিপয় উপায় সমূহ উপস্থাপন করছি-
শত ব্যস্ততার জীবনটাতে তুচ্ছ বিষয় যে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কর্মব্যস্ততা বিরক্তি সৃষ্টি করে মানসিক চাপ। তবে চাপ যেভাবেই আসুক না কেন তা নিয়ন্ত্রণে আনাটা বেশ জরুরি। তবে টিপস্‌গুলো ব্যাক্তি বিশেষ ও পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রের উপর প্রযোজ্য হতে পারে।
১। কাঙ্খিত লক্ষ্য স্থির করাঃ
মাঝি বিহীন নৌকা যেমন কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছেনা,তেমনি লক্ষ্যহীন শিক্ষার্থীর শিক্ষা বাস্তব জীবনে আলোর মুখ দেখতে  তেমন খুব একটা কাজে লাগে না। তাই প্রথমত শিক্ষার্থীর লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আশা করি তোমার লক্ষ্য স্থির করাই আছে। সে ক্ষেত্রে তুমি তোমার কাঙ্খিত লক্ষ্যটিকে স্মরন কর। যত পরিশ্রমই হোক ভালো রেজাল্ট করা তোমার এবং তোমার পরিবারের সকলের প্রত্যাশা। সেই কাঙ্খিত চাওয়াকে চরিতার্থ করতে পড়ায় মনোযোগ আকৃষ্ট করা প্রয়োজন তা ভেবে দেখো তোমার মনে একটা জিদের উদ্রেক হবে এবং পড়ায় মনোযোগ  ফিরে পাবে।
২। ক্ষুধা নিবারণঃ
“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এ বাণীটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষার্থী পাঠ অনুশীলনের সময় ক্ষুধার তাড়নায় পাঠে মনোযোগ বাড়াতে পারেনা। আবার দীর্ঘ সময় পড়তে গিয়ে ক্ষুধা পেয়ে বসে। এমন পর্যায় অনুভুত হলে ক্ষুধা নিবারণ করা প্রয়োজন। উদর পূর্তি করে আবার পড়তে বসো দেখবে পড়ায় মনোযোগ ফিরে এসেছে।
৩। সময় সচেতনতাঃ
 সময় বহমান নদীর স্রোতের মত আপন মনে চলমান। সময় কারও জন্য অপেক্ষাও করে না। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই দরজায় টোকা দেয়। তাই সময় সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। আবার পড়তে বসার ক্ষেত্রে একেক জন একেক সময় গভীর মনোযোগের সাথে পড়তে অভ্যস্ত। যেমন-কেউ খুব ভোরে পড়ে,কেউ  সন্ধ্যায়,কেউ গভীর রাতে এমনকি কেউ ভোর রাতে পড়তে ভালো মনে করে। সে ক্ষেত্রে তোমার যে সময়টায় সুবিধে মনে কর সেই সময় পড়তে পার। পড়াসহ দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনে রুটিন করে নিতে পার। সর্বপরি পারিপাশ্বিক অবস্থা বুঝে পড়ায় মনোনিবেশ করতে না পারলে মানসিক চাপ না বাড়িয়ে ব্রেনটাকে বিশ্রাম দিতে পার। মনে রাখতে হবে ‘বিশ্রাম কাজের অঙ্গ’।
৪। গান শোনাঃ
গান শুনতে কমবেশি প্রায় লোকেরই ভালো লাগে,বিশেষ করে পরীক্ষার সময় মানসিক বিষন্নতা কাটানোর জন্য গান একটা উপভোগ্য বিষয়। দীর্ঘ সময় পড়ার ফলে শিক্ষার্থী অনেক সময় পড়া আত্মস্থ করতে ব্যার্থ হয়। এমতাবস্থায় তুমি কিছুক্ষণের জন্য গান শুনতে পার। এর ফলে তুমি মানসিকভাবে প্রশান্তি পাবে এবং দেখবে পড়ায় পুনরায় মনোযোগ ফিরে এসেছে এবং দ্রুত পড়া আত্মস্থ হচ্ছে।
৫। ঘুমের প্রয়োজনঃ
অনেকক্ষণ ধরে পড়ার ফলে পাঠকের মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। ফলে পাঠক স্বাভাবিকভাবে কোন কিছু অনুধাবন ও আত্মস্থ করতে ব্যার্থ হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী/পাঠক কিছুটা সময় ঘুমিয়ে থাকলে ব্রেনের রিফ্রেশমেন্ট হবে। ঘুম থেকে উঠে আবার পড়তে বসলে ব্রেনে দ্রুত পড়া ক্যাচ করতে পারবে। তাই অতিরিক্ত চাপ কমানোর জন্য অবশ্যই ঘুমের প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে বিশ্রাম কাজের অঙ্গ।
৬। মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াঃ
আমাদের শরীরের কোষগুলোকে সতেজ রাখার জন্য গ্লোকুজ প্রয়োজন। মিষ্টি জাতীয় খাবার দেহে প্রবেশ করলে শরীর সতেজ হয়। সেই সাথে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মনোযোগ আকর্ষণে সহায়তা করে।
৭। মেডিটেশনঃ
মেডিটেশন মন ও শরীর দুইই প্রাণবন্ত করে তোলে। মেডিটেশনের ফলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়া মেডিটেশনের ফলে ব্রেণ এর রিফ্রেশমেন্ট ঘটে। ফলে পড়া খুব দ্রুত মুখস্ত হয়ে যায় এবং তা বহুক্ষণ মনে থাকে।
৮। হাটা-চলা করে পুনরায় পড়তে বসাঃ
লেখা পড়া করতে মানসিক চাপ কমানো ও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কিছু সময়ের জন্য হাটা-চলা করে আবার পড়তে বসলে পড়ায় মনোযোগ বাড়ে।
৯। পানি পান(নাস্তাযোগে):
পড়তে বসে হাতের নাগালে পানি রাখা প্রয়োজন। অনেক শিক্ষার্থী এক সাথে পেট পুরে খেতে অভ্যস্ত নয়,আবার দীর্ঘ সময় লেখা-পড়া করতে গিয়ে ক্ষুধার তাড়নায় পড়া ব্যহত হয় এবং মানসিক চাপ বাড়ায় সে জন্য সামান্য পানি ও হাল্‌কা নাস্তা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এ সব কিছু নির্ভর করবে শিক্ষার্থীর অভ্যাসের উপর।
১০। মুখ ধুয়ে পড়তে বসাঃ
দীর্ঘ সময় লেখা-পড়া করতে মানসিক চাপ বাড়ার কারণে দু’চোখ জুড়ে ঘুম পায়, শিক্ষার্থীকে পড়ার জগৎ থেকে নিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে। নষ্ট হয়ে যায় শিক্ষার্থীর প্লান । তাই ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়ার পর পড়তে বসলে,আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
১১। মানসিক দিক পরিবর্তনঃ
গল্প বা আলোচনার মাধ্যমে মনটাকে একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে আবার পড়তে বসলে পড়ায় মনোযোগ আকর্ষণ হবে এবং প্রাণ ফিরে পাবে।
১২। শারীরিক সমস্যা থাকলে তা দূর করাঃ
শরীর মন একই সুতায় গাঁথা,তাই শরীর ভালো না থাকলে বা অসুস্থ্য থাকলে মানসিক চাপ কাজ করে পড়া শোনায় মনোযোগ আকর্ষণ  হয় না। আবার চিকিৎসা গ্রহণ করার সাথে সাথেই ভালো হবে এমনটাও নয় বিধায় ধৈর্য ধারন করতে হবে। তাই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ভাষায় বলতে হয়- “মনেরে আজ কহ যে,ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে” ।
১৩। মাথা চিরুনী করণ/মাথা আঁচড়ানোঃ
পৃথিবীতে সকলেই সুন্দরের পূজারি। সুন্দর কিছু দেখে মানুষের মনের বিষন্নতা দূর হয়। সেই ক্ষেত্রে নিজের সৌন্দর্যের কথা সেতো বলার অপেক্ষাই রাখে না কি যে ভালো লাগে! যারা সৌন্দর্য পিয়াসী তারা প্রায় সময়ই রূপচর্চা করে থাকে। আর যারা সৌন্দর্য থেকে একটু দূরে তাদের ক্ষেত্রে শিলার বলেন-“সত্য জ্ঞানের জন্য বিদ্যমান থাকে আর সৌন্দর্য মানুষের অন্তরের পরিপূর্ণতা আনে”। তাই সুন্দরের যে প্রথম দর্শনীয় স্থান মাথা বা মুখমন্ডল তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে মানসিক প্রশান্তি এনে পড়ায় মনোনিবেশ করতে পারি।
১৪। সুগন্ধি ব্যবহারঃ
সুগন্ধ বা সুবাস প্রায় সকলের নিকটই প্রিয়। ফুল শুধু মানুষকে তার সৌন্দর্য দিয়ে আকর্ষণ করে তাই নয়,আকর্ষণ করে তার সৌরভেও। সেই সৌরভের সংস্পর্শে গেলে মানুষের মনের পঙ্কিলতাগুলো ধীরে ধীরে দূর হতে থাকে। যে স্বল্প পরিমাণে সুগন্ধ পায়,সেই সুগন্ধের মাধুর্য বোঝে। তাই জিয়ান রোষ্টান্ড এর ভাষায় বলতে হয়- “সুগন্ধি অদৃশ্য হলেও মানুষের মনকে চমৎকারভাবে নাড়া দেয়। এ থেকে প্রতীয়মান ব্যাক্তি নিজে অথবা পড়ার রুমে মানসিক স্থিতিশীলতা,ভালো লাগা বা মানসিক চাপ ও পড়ায় মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সুগন্ধির ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে এয়ার ফ্রেশনার,আগর বাতি,আতর/সেন্ট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শেষ পর্ব 


মো: রেজাউল করিম
বি,এ(অনার্স)এম.এ;বি.এড;এম.এড

jonakiict school Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Powered by Blogger.
Published By Gooyaabi Templates