করোনা ভাইরাস : ১১ প্রশ্নের উত্তর - jonakiict school

Latest News

করোনা ভাইরাস : ১১ প্রশ্নের উত্তর

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ১১০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্যানডামিক (বিশ্বের বড় অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি) ঘোষণা করেছে। করোনা ভাইরাস গোত্রীয় নতুন এই ভাইরাসটির প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো অজানা। এর চিকিৎসায় ওষুধ না থাকায় এ নিয়ে জনমনে রয়েছে আতঙ্ক। অজানা ভাইরাসটি নিয়ে লোকজনের প্রশ্নেরও শেষ নেই। তেমন ১১টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে বিবিসি অনলাইন।
প্রশ্ন ১. করোনা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা জীবাণুর উন্মেষ পর্বটি কত দিনের?
উত্তর: বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত ৫ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। তবে কিছু মানুষের এর অনেক পরেও লক্ষণ দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইনকিউবেশনের সময় ১৪ দিন পর্যন্ত থাকে। তবে কোনো কোনো গবেষকের মতে এটা ২৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। ইনকিউবেশনের সময় কতখানি, তা জানা ও বোঝা খুবই জরুরি। এটা জানা থাকলে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া আরও কার্যকরভাবে সম্ভব হয়।
প্রশ্ন ২. একবার যাঁরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাঁরা কি পরের বারের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকেন?
উত্তর: এটা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। ভাইরাসটিকে প্রথম দেখা গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। তবে অন্য ভাইরাস এবং করোনা ভাইরাসের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে আপনার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া প্রয়োজন, যা আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। সার্স এবং অন্য করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে পুনরায় আক্রান্তের ব্যাপার দেখা যায়নি। তবে চীন থেকে কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও তাদের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। তবে সেসব ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রশ্ন ৩. করোনা ভাইরাস ও ফ্লুর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: করোনা ভাইরাস এবং ফ্লু বা সাধারণ জ্বরের অনেক লক্ষণেরই মিল রয়েছে। তবে পার্থক্য কোথায়, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা মুশকিল। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে মূল লক্ষণ হচ্ছে জ্বর ও কাশি। ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে অন্য লক্ষণগুলোও দেখা যায়। যেমন গলাব্যথা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শ্বাসকষ্টে ভোগেন।
প্রশ্ন ৪. সেলফ আইসোলেশন বা রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় নিজস্ব কোয়ারেন্টাইন বা আলাদা থাকার বিষয়টি কী?
উত্তর: সেলফ আইসোলেশন মানে হচ্ছে বাড়িতে ১৪ দিন থাকা। ওই সময়টায় কাজে না যাওয়া, স্কুলে বা অন্যান্য জনসমাগমে না যাওয়া এবং গণপরিবহন বা ট্যাক্সি পরিহার করা। বাড়িতে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকেও আলাদা হয়ে থাকতে হয়। কারও সামনে আসা উচিত নয়। এ সময়টায় খাবার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় কিছুর দরকার হলে সাহায্যকারী কাউকে বলুন সেসব আপনার দরজায় পৌঁছে দিতে। এ সময় বাড়ির পোষা প্রাণী থেকেও দূরে থাকতে হবে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে পোষা প্রাণীদের স্পর্শ করার আগে পরে হাত ধুয়ে নিন।
প্রশ্ন ৫. অ্যাজমায় ভোগা মানুষের জন্য করোনা ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক?
উত্তর: করোনা ভাইরাসে শ্বাসতন্ত্রজনিত সংক্রমণ অ্যাজমার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, অ্যাজমা রোগীদের যাঁরা ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন, তাঁরা বেশ কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। করোনা ভাইরাসসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত যে কোনো সংক্রমণ থেকে অ্যাজমা ঝুঁকি কমাতে ইনহেলার সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৬. স্কুল বন্ধ থাকলে বাবা-মায়ের জন্য আর্থিক কোনো সহায়তা থাকবে কি না? (ব্রিটিশ পরিবারগুলোর উপযোগী প্রশ্ন)
উত্তর: বাড়ির এই জরুরি প্রয়োজনে নিয়োগকর্তাদের আপনাদের ছুটি দিতে হবে। তবে এর জন্য তাঁরা আপনাকে কোনো অর্থ দেবেন না। আপনি যে সময়টুকু ছুটি নেবেন, তার জন্য যৌক্তিক অর্থ দেয়া উচিত। আপনি বিনা বেতনের ছুটিরও আবেদন জানাতে পারেন। আপনার করোনা ভাইরাস হলে উপকারভোগী ভাতা পাওয়ার ব্যাপারে সরকার (ব্রিটিশ সরকার) নিয়মকানুন শিথিল করেছে।
প্রশ্ন ৭. করোনা ভাইরাস কি দরজার হাতল থেকেও ছড়াতে পারে এবং ভাইরাসটি কতক্ষণ টিকে থাকে?
উত্তর: আক্রান্ত ব্যক্তির থুতু-কাশি ওই ব্যক্তির হাতে লাগলে, তিনি যা কিছু স্পর্শ করবেন তা-ই দূষিত হয়ে পড়বে। ঝুঁকির ক্ষেত্রে দরজার হাতল একটি ভালো উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনাভাইরাস দরজার হাতলের মতো কোনো বস্তুর উপরিভাগে টিকে থাকতে পারে, সেটা কয়েক দিন পর্যন্তও হতে পারে। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি ও বিস্তৃতি এড়াতে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিয়মিত হাত ধোয়া।
প্রশ্ন ৮. সবার জন্য উন্মুক্ত সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা কি নিরাপদ?
উত্তর: বেশির ভাগ সুইমিং পুলেই ক্লোরিন থাকে। ক্লোরিনের মতো রাসায়নিক পদার্থ ভাইরাস মারতে পারে। তাই পুলে ক্লোরিন দেয়া থাকলে সেখানে সাঁতার কাটা নিরাপদ। তবে এরপরও সাঁতারের আগে-পরে পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ থেকে বা ভবনের দরজার হাতলের মতো কোনো বস্তুর উপরিভাগ থেকে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তা আপনার মধ্যে ছড়াতে পারে। এ ছাড়া ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির খুব কাছাকাছি এলে তাঁর সর্দি-কাশি থেকেও ছড়াতে পারে। নানা উপায় রয়েছে, যা থেকে আপনি ভাইরাসটি থেকে দূরে থাকতে পারেন।
প্রশ্ন ৯. ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়া বা ছড়ানো সীমিত করতে কি আমার মাস্ক পরা শুরু করা উচিত?
উত্তর: যদিও চিকিৎসক ও সার্জনেরা প্রায়ই মুখে মাস্ক পরেন, তবে জনসাধারণের মাস্ক পরার তাৎপর্যের তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, মাস্ক করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয় বলে তারা মনে করে না। ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থার বাইরে মাস্ক পরার বড় কোনো উপকারিতার তেমন কোনো তথ্য তাদের জানা নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, যেমন ভাবে মুখ স্পর্শ করার আগে নিয়মিত হাত ধোয়া। তবে হাত ধোয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
প্রশ্ন ১০. শিশুদের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
উত্তর: চীনের ডেটা অনুসারে, সাধারণভাবে শিশুদের করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি কম দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হতে পারে, শিশুরা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারছে অথবা তাদের কোনো লক্ষণ নেই অথবা তারা ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ার মতো মৃদু অসুস্থ হয়েছে।এরপরও অ্যাজমার মতো ফুসফুসজনিত অসুস্থতা রয়েছে, এমন শিশুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটি এই শিশুদের অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্রশ্ন ১১. আক্রান্ত ব্যক্তির তৈরি করা খাবার থেকে কি ভাইরাসটি ছড়াতে পারে?

উত্তর: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের মাধ্যমে অন্য মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে যেতে পারে, যদি আক্রান্ত ব্যক্তি খাবার তৈরির বিষয়টি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে না করে থাকেন। হাতে থুতু-কাশির ছিটা থেকেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। জীবাণু ঠেকাতে কিছু স্পর্শ করার আগে এবং খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোয়া সবার জন্য মঙ্গল।

jonakiict school Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Powered by Blogger.
Published By Gooyaabi Templates